StudyMamu

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

August 22, 2022

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে? প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে? 

প্রাকৃতিক পরিবেশ (Physical Environment) : পরিবেশের যে সব উপাদান প্রকৃতিসৃষ্ট তাকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলা হয়। যেহেতু প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির সৃষ্টি তাই এর উপাদানগুলি সৃষ্টিতে মানুষের কোনো ভূমিকা থাকে না।

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ (Components of Physical Environment )

বিখ্যাত ভূগোলবিদ এলসওয়ার্থ হান্টিংটন প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলিকে প্রধান ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা— 

  1. গোলাকার পৃথিবী,
  2. ভূমিরূপ, 
  3. জলবায়ু, 
  4. জলভাগ,
  5. খনিজ ,
  6. মৃত্তিকা।

নীচে উপরোক্ত ছয়টি প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল—

1. গোলাকার পৃথিবী :

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলি মধ্যে প্রথম হল গোলাকার পৃথিবী। পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারের জন্য সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্য হয়। এই কারণে পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল অর্থাৎ উভয় গোলার্ধে 0-30° অক্ষাংশের জলবায়ু উন্ন প্রকৃতির, 30-60° অক্ষাংশের জলবায়ু নাতিশীতোয় এবং 60°-90° অক্ষাংশের জলবায়ু শীতল প্রকৃতির হয়েছে। সেই অনুপাতে মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশও আলাদা আলাদা। পরিবেশগত পার্থক্যের জন্যই নিরক্ষীয় অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর সঙ্গে তুন্দ্রা অঞ্চলের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

2. ভূমিরূপ :

প্রাকৃতিক পরিবেশের দ্বিতীয় উপাদান হল  ভূমিরূপ । ভূমিরূপের প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনটি। যথা— সমভূমি, মালভূমি এবং পার্বত্যভূমি। মানুষের প্রগতি প্রত্যক্ষভাবে ভূমিরূপের ওপর নির্ভরশীল। ভূমিরূপের পার্থক্যের জন্যই মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ঘর-বাড়ি, পোশাক-পরিচ্ছদ প্রভৃতির পার্থক্য হয়ে থাকে। সমভূমি অঞ্চলে কৃষি, শিল্প এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত। অপর দিকে পার্বত্য এলাকা এবং মালভূমি অঞ্চল কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনুন্নত হওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী অনুন্নত।

3. জলবায়ু :

প্রাকৃতিক পরিবেশের তৃতীয় উপাদান হল জলবায়ু। জলবায়ুর বিভিন্নতা অনুযায়ী মানুষের খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি, কর্মদক্ষতা, বৌদ্ধিক বিকাশ সবকিছুই নির্ভরশীল। যেমন নিরক্ষীয় অঞ্চলের জলবায়ুর বৈচিত্র্য না থাকায় সে অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে জীবনের বৈচিত্র্য খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। অপরদিকে মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে নিত্যনতুন কর্মে উদ্দীপ্ত হতে দেখা যায়। তারা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির ধারাকে বজায় রেখে চলেছে।

4. জলভাগ:

প্রাকৃতিক পরিবেশের চতুর্থ উপাদান হল জলভাগ । পৃথিবীর প্রায় 3/4 অংশ জলভাগ। মহাসাগর, সাগর, হ্রদ, নদ-নদী ইত্যাদির মাধ্যমে তা বণ্টিত। সুপ্রাচীনকাল থেকেই জলভাগ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে আসছে। প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতাগুলি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল। আধুনিক সভ্যতার বিকাশ জলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। স্পেন, ইংল্যান্ড,ফ্রান্স, পোর্তুগাল ইত্যাদি দেশ নৌ-বাণিজ্যে উন্নত। উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণ জল। 

5. খনিজ সম্পদ :

খনিজ সম্পদ মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীকে নিয়ন্ত্রিত করে। এটি আধুনিক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমন- ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত পূর্বের সাক্ষী এখন খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করেই বিখ্যাত জামসেদপুরে পরিণত হয়েছে। এখানেই গড়ে উঠেছে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র। এই শিল্পকেন্দ্রকেই ঘিরে গড়ে উঠেছে জনবসতি।

6. মৃত্তিকা :

প্রাকৃতিক পরিবেশের সবশেষে উপাদান মৃত্তিকা । পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার ওপর নির্ভর করেই মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত বা অনুন্নত হয়েছে। যেমন — গাঙ্গেয় সমভূমির উর্বর মৃত্তিকায় বসবাসকারী মানুষদের জীবনযাত্রার মানের তুলনায় ছোটনাগপুর মালভূমির অনুর্বর মৃত্তিকার মানুষদের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত।

মূল্যায়ন :

উপরোক্ত এই ছয়টি প্রাকৃতিক উপাদান পরস্পর পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত বলে মানবসমাজে নানা প্রকার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এগুলি ছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠনে স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করেই মানুষ তার সাংস্কৃতিক পরিবেশকে গড়ে তোলে।

Share Post :

Leave a Comment