StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

দ্বাদশ শতকের নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য

দ্বাদশ শতকের নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য।

আঞ্চলিক সাহিত্যের বিকাশের জন্য দ্বাদশ শতক স্মরণীয়। অবশ্য আঞ্চলিক ভাষায় উল্লেখযোগ্য রচনা সেইসব অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল যেখানে চার্চের প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে লাতিন ভাষার চর্চা ও স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। দ্বাদশ শতকের শুরু থেকেই দলিল দস্তা বেজে লাতিন এর ব্যবহার বিরল হয়ে দাঁড়ায়। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কিছু কিছু গীতিকবিতায় মানুষের আনন্দ বেদনা, বিরহ মিলন কথা সুন্দর সহজ সরল ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছিল। একইসঙ্গে দেখা গিয়েছিল নারী জাতির প্রতি গভীর সম্মান বোধ। 

দ্বাদশ শতকের রেনেসাঁসের অপর বৈশিষ্ট্য নিহিত ছিল তর্কবিদ্যা চর্চার আন্দোলনের মধ্যে। এর সবচেয়ে বড় প্রবক্তা ছিলেন পিটার অ্যাবেলার্ড। তিনি পারীতে তার শিক্ষাগুরু উইলিয়ামকে তর্ক যুদ্ধে পরাজিত করেন। ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অ্যাবেলার্ড লিখেছিলেন holy Trinity যা রক্ষণশীল গির্জার মন পুত হয়নি। ঘোর বাস্তববাদী অ্যাবেলাড বিশ্বাস করতেন যে, এই বিশ্বের সত্তা সত্য নির্ভর করে মানুষের মনের পর্যবেক্ষণ, বিচার-বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তের ওপর। তার মতে জ্ঞান লাভের প্রথম সোপান হল প্রশ্ন করা।

Peter Abelard
Peter Abelard

অনুবাদ বা ভাষান্তরিত করনের কাজেও দ্বাদশ শতকের মনীষী বৃন্দ স্থান অধিকার করে রেখেছেন। দীর্ঘকাল ইউরোপের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ যথাক্রমে গ্রিক ও লাতিন ঐতিহ্যের অনুসারী ছিল। মুসলিম অধিকৃত জেরুজালেম, আলেকজান্দ্রিয়া, কায়রো, টিউনিস, এবং স্পেনে প্রাচীন গ্রীসের যে সাংস্কৃতিক সম্পদ সুরক্ষিত ছিল তা একেবারেই খ্রিস্টান জগতের আয়ত্তের বাইরে থেকে গিয়েছিল। প্রাচীনকালের মূল্যবান বিজ্ঞান চর্চার সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ ছিল গ্রিক এবং আরবি গ্রন্থ সমূহে। প্রধানত তিনটি কেন্দ্র স্পেনের টলেডো, সিসিলির প্যালামু এবং কনস্টান্টিনোপল থেকে গ্রীক এবং আরবীয় বিজ্ঞান অনুবাদের মাধ্যমে পাশ্চাত্য জগতে পৌঁছতে পেরেছিল। বলাবাহুল্য এই ভাষান্তরের কাজ বিশেষ করে আরবি থেকে লাতিনে সহজ ছিল না। এই অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হলেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল দ্বাদশ শতকের নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রেনেসাঁর এই পটভূমিতে স্কলাস্টিক দর্শনের উদ্দেশ্য ছিল ভ্রান্তি বৈপরীত্য দূর করে খ্রিস্টান আদর্শে কতৃত্ব স্থাপন করতে এই আন্দোলন চেয়েছিল আরবিয় বিজ্ঞান বাইজান টাইন দর্শন ও অ্যারিস্টটলীয় বিজ্ঞান সমন্বয় সাধন করতে। তবে এই সমন্বয়ে সাধনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আরবীয় যুক্তির সঙ্গে খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের বিরোধের কারণে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অ্যালবাম ম্যাগনাস, টমাস অ্যাকুইনাস প্রমুখ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্সিসকানবাও বিজ্ঞান চর্চার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এদের নেতা ছিলেন গ্ৰেসেষ্টি। দক্ষিণ ইতালি ও সিসিলিতে নর্মান শাসক রজার ও জার্মান শাসক দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের আমলে ভূগোল বিজ্ঞান চর্চার কথা জানা যায়। 

দ্বাদশ শতকের সমসাময়িক চিন্তাভাবনা বিশ্বাস ও চেতনার ছাপ পাওয়া যায়, সমকালীন সাহিত্যে। শিল্প সাহিত্যে যে দুই ধারা দেখা যায় তার একটি ছিল লাতিন খ্রিস্টান ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং অপরটি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ। দ্বাদশ শতকে জাস্টিনিয়ান কোড বা আইন সংহিতার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। নতুন শহর ও নগরের প্রয়োজন মেটাতে রোমান আইনের বিরুদ্ধাচারণ শুরু হয়ে যায়। আইনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা দেখা যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আইন শাস্ত্র পাঠদান শুরু হয়।

দ্বাদশ শতকের শিল্প স্থাপত্যের বিকাশ প্রধানত চার্চকে কেন্দ্র করে এবং চার্চের পৃষ্ঠপোষক তাতেই গড়ে উঠেছিল। এই সময়ে শিল্প স্থাপত্য যে সবাতন দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করে নবীনের আবাহন করেছিল তার মূলে ছিল আর্থ সামাজিক পরিবর্তন। বর্বর আক্রমণ গুলি স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছিল এবং বাণিজ্যের বিকাশ শিল্পকাযে সহায়তা করার মতো আর্থিক সংগতি দান করেছিল বহু দেশকে। দ্বাদশ শতকে যে নতুন শিল্পনীতির আবির্ভাব ঘটে তা গথিক শৈলী নামে পরিচিত। এর সূত্রপাত ঘটে ফ্রান্সে। নোটার দাম গির্জার মধ্যে এর বলিষ্ঠ আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঐতিহাসিক প্রেভিটে অর্টন এর মতে এই স্থাপত্য রীতির তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো – রিবভল্ট, পয়েন্টেড আর্চ এবং ভাসমান আলম্ব বা ফ্লাইং বুট্রেস। এই শিল্প রীতিতে নির্মিত সৌধ গুলির শীর্ষ দেশ ছিল তীক্ষ্ণ, অভ্র ভেদি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অ্যামিয়ে, রাস প্রভৃতি স্থানের পৃথিবী বিখ্যাত ক্যাথিড্রাল গুলি।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *