সার্ক এর উদ্দেশ্য কি ছিল। SAARC-এর উদ্দেশ্য কী ছিল ।
SAARC- এর সম্পূর্ণ কথাটি বা পূর্ণরূপ হলো SOUTH ASIAN ASSOCIATION FOR REGIONAL CO-OPERATION (SAARC) । আঞ্চলিক সংগঠন রূপে অপেক্ষাকৃত নবীন সার্কের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ১৯৮০’র দশকের শুরুতে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক গঠনের প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিলেন তার পরিকল্পনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ শুরু হয় যার পরিণতি সার্ক এর প্রতিষ্ঠা। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা নিয়ে সার্ক এর সদস্য দেশ মোট সাতটি । ২০০৭ সালে ভারতের উদ্যোগে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য হয়েছে।
সার্ক এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সার্কের সনদে বলা হয়েছে যে –
- দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা । এই অঞ্চলের অর্থনেতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, এবং প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
- দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা । পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে একে অন্যের সমস্যা উপলব্ধি করা।
- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা স্থাপন করা, ।
- অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সহযোগিতা দৃঢ় করা ।
- আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থ সুরক্ষার জন্য নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, এবং
- আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও আঞ্চলিক সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনের মতই সার্কের প্রশাসনিক পরিকাঠামোর শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের বৈঠক। বছরে একবার এই বৈঠক বসবে যেখানে সার্কের নীতি নির্ধারণ এবং কর্মপদ্ধতিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।
![]() |
SAARC ( সার্ক ) |
প্রশাসনিক কাঠামোর দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রী পরিষদ যা বছরে দুবার মিলিত হয়ে সংগঠনের নীতি ও কর্মসূচী প্রণয়ন করে। সনদ অনুসারে মন্ত্রী পরিষদের মূল দায়িত্ব পাঁচটি –
- সংগঠনের নীতি নির্ধারণ।
- সদস্য- রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতার মাত্রা পর্যালোচনা।
- সহযোগিতার নতুন এলাকা চিহ্নিত করা।
- প্রয়োজন অনুসারে সহযোগিতার নতুন কাঠামো তৈরী করা।
- সদস্য রাষ্ট্রগুলির সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। প্রশাসনিক কাঠামোর তৃতীয় স্তরে রয়েছে স্থায়ী কমিটি বা স্ট্যান্ডিং কমিটি যা প্রতিটি রাষ্ট্রের বিদেশ সচিবদের নিয়ে গঠিত। এই কমিটির কাজ সারা বছর ধরে সংগঠনের কাজকর্ম দেখাশোনা ও পর্যালোচনা করা এবং তার ভিত্তিতে মন্ত্রীপরিষদের কাছে রিপোর্ট পেশ করা।
- সনদে বলা হয়েছে যে সার্কের একটি স্থায়ী সচিবালয় থাকবে যেখান থেকে যাবতীয় কাজ পরিচালনা করা হবে। বর্তমানে এই সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে SAARC-এর উদ্দেশ্য সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেমন, টেকনিকাল কমিটি বা অ্যাকশন কমিটি যেগুলি বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত। এখনও পর্যন্ত ১৩টি – টেকনিকাল কমিটি গঠন করা হয়েছে কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, পরিবেশ, আবহাওয়া বিদ্যা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, মাদক দ্রব্যের চোরাচালান রোধ, গ্রামোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পর্যটন, পরিবহন ও নারী কল্যাণ।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্ক এর উদ্দেশ্য ত্বরান্বিত করার জন্য তৈরী হয়েছে পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্র ১) কৃষি পরিষেবা ও তথ্য ঢাকা, ২) যক্ষা রোগ প্রতিরোধ – কাঠমান্ডু, ৩) আবহাওয়া গবেষণা ঢাকা, ৪) সার্ক- এর নথিপত্র সংরক্ষণ নতুন দিল্লী, ৫) মানবসম্পদ – উন্নয়ন ইসলামাবাদ। এছাড়াও শিশুকল্যাণ, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী কার্যকলাপ, খাদ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সার্ক – গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলেছে।