StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলাফল

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর ফলাফল বিশ্লেষণ কর। 

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বাংলা, বিহারের অর্থনীতি ও সমাজজীবনকে চুরমার করে দেয়। ইংল্যান্ড এর ব্ল্যাক ডেথ বা কৃষ্ণ মড়কের মতো এই মন্বন্তর ছিল ভয়ংকর সর্বনাশা। বাংলার লক্ষী এই দুর্ভিক্ষে যেন পথের ভিখারিণী তে পরিণত হয়েছিল। বাংলার এক একটি জনসংখ্যা ধ্বংস হয় ও এক তৃতীয়াংশ ভাগ কৃষি জমি অনাবাদি হয়। প্রায় পুরুষের পর বাংলায় লোক সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভাব হয়।

গ্রাম বাংলা জনশূন্য শ্মশানে পরিণত হয়। কৃষকের শূন্য ভগ্নদশা গ্রস্থ মাটির কুঠির গুলি একমাত্র বিরাট ধ্বংসের নীরব স্বামী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভূমিগুলি অনাবাদী হয়ে আগাছা ও জঙ্গলে ভর্তি হয়। সুজলা সুফলা বাংলা অকস্মাৎ একটি মহাশ্মশানে পরিণত হয়। জেমস মিল ও ওয়ারেন হেস্টিংস এর মতে বাংলা, বিহারের মোট তিন কোটি লোকের মধ্যে এক কোটি লোক প্রাণ হারায়। হান্টার এর মতে বাংলা ও বিহারে প্রতি ১৬ জনে একজন লোক মারা যায়। 

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর ফলাফল ( ৭৬ এর মন্বন্তর ছবি )

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলাফল সামরিক ও অর্থনৈতিক ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার কৃষক শ্রেণি শুধু এই দুর্ভিক্ষে ক্ষয় হয়নি, পুরাতন জমিদার পরিবার গুলির অধিকাংশ প্রচন্ড বারতি করও দুর্ভিক্ষের চাপে ধ্বংস হয়। হান্টারের মতে বাংলার জমিদারের অধিকাংশ এই দুর্ভিক্ষের ফলে ধ্বংস হয়। নাটকের রানী ভবানী এবং মহারানী কৃষ্ণ চন্দ্রের জমিদারি বাকি খাজনার জন্য হস্তান্তরিত হয়। শিল্পী কারিগর রাও ব্যাপক মারা পড়ে। ফলে তাত বস্ত্র রেশম শিল্প, লবণ ও সূরা শিল্পের উৎপাদন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলার বিখ্যাত ও তাঁত কেন্দ্র ও মুর্শিদাবাদের রেশম বস্ত্রের রপ্তানি কমতে থাকে। বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা আরো দীর্ঘকাল খারাপ হয়, কোম্পানির বাণিজ্যের মন্দা দেখা যায়।

জমি জায়গা অনাবাদী হয়ে বন জঙ্গলে পরিণত হয় বহু লোক গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে। বহু সংখ্যক কৃষক দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা গেলে জমি চাষের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক লোক ছিল না। চাষের জমির পরিমাণ অনুযায়ী চাষের লোক কম থাকায় জমিদার ও কৃষকের সম্পর্কে ক্ষেত্রে কিছুদিন পরিবর্তন ঘটে। আগে লোক বেশি জমি কম থাকায় কৃষকরা জমিদারের কাছে লালায়িত ছিল। এখন লোক কম জমি বেশি থাকায় জমিদাররা উদার শর্তে চাষীদের অন্তত কিছুদিনের জন্য জমি দিতে বাধ্য হয়।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলাফল ছিল ভয়ংকর, তাছাড়া নাজাই প্রথার অর্থ ছিল কোন একজন কৃষক রাজস্ব বাকি ফেললে সেই গ্রামের অন্য কৃষকদের সেই রাজস্ব দিতে হত। এখন বহু কৃষক মারা পড়ায় তাদের বকেয়া রাজস্বের ভার জীবিত কৃষকদের উপর পড়ে। এই দায়িত্ব বইতে না পেয়ে নিজ যোতের রায়ত জমির শত ছেড়ে দিয়ে পাইবাস্থ রায়তে পরিণত হয়। মন্বন্তরের পর পাইবাস্থ রায়তে সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ডা: এন কে সি : হের মতে মন্বন্তরের পর সমাজ বিরোধীদের উৎপাত বেড়ে যায়। উত্তর ভারত থেকে সন্ন্যাসী ও ফকিরের ডাকাত দল দিনে দুপুরে বাংলার গ্রাম অঞ্চলে ডাকাতি ও লুটপাত করতে থাকে। উত্তর বাংলায় বহু দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ ডাকাতিতে বৃত্তি হিসেবে গ্রহণ করে।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর ফলাফল এ কোম্পানির রাজস্বের আয় কমে যায়। বাণিজ্যে ও মন্দা দেখা দেয়। কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার জন্য ও বাংলার কৃষি শিল্পকে রক্ষার জন্য বিলেতের পরিচালক সভা দ্বৈত শাসন লোপ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের এর সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন কার্টিয়ার। ওয়ারেন হেস্টিংস কে নির্দেশ দেওয়া হয়নি এখন থেকে কোম্পানি যেন বাংলার রাজস্ব ও শাসনের প্রত্যক্ষ দায়িত্ব গ্রlহণ করে। আপাতত বাংলার রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি পড়ায় কোম্পানি আর্থিক সংকটে পড়ে। এবং ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রার্থী হয়। ফলে পার্লামেন্ট কোম্পানির শাসনব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *