মনোযোগ কাকে বলে। মনোযোগের বৈশিষ্ট্য ।
মনোযোগ কাকে বলে।
মনোবিজ্ঞানী Stout এর মতে, “Attention is conation, determined cognition”। অর্থাৎ, মনোযোগ হল নির্বাচিত চেতনামূলক জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া।
মনোযোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ।
মনোযোগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল
[1] মনোযোগের কেন্দ্রানুগতা:
এখানে এককেন্দ্রীয় বৃত্তের সঙ্গে মনের বিভিন্ন স্তরকে তুলনা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়ার (Central process) মনোযোগের যে দুটি স্তর আছে, সেগুলি হল
- চেতনার স্তর
- অবচেতন স্তর।
চিত্র:
![]() |
মনোযোগ এর বৈশিষ্ট্য |
ভিতরের ছোটো বৃত্তটি হল চেতনার বিস্তৃতি; যে বিস্তৃতির অন্তর্গত যে-কোনো বস্তু সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকি। যখন উক্ত সচেতন স্তরের অন্তর্গত কোনো বস্তু চেতনার কেন্দ্রস্থলে (Core of Con sciousness) আসে তখন ওই বস্তুতে মনোযোগী হই। এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষণের কোনো বিশেষ বস্তু যখন চেতনার কেন্দ্রস্থলে আসে, তখন উপস্থাপিত বস্তুটি সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানার্জন হয়। আর যে সকল বস্তু বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্যক্তি সচেতন থাকে না, সেগুলি অবচেতন স্তরে থাকে।
[2] মনোযোগের পরিসর:
মনোযোগের পরিসর (span of attention) Tachistoscope নামক যন্ত্রের সাহায্যে মাপা যায়। ‘Tachis to’ কথার অর্থ গ্রিক ভাষায় ‘ক্ষিপ্ত এবং ‘scope’ কথার অর্থ হল দর্শন বা দেখা।
[3] মনোযোগের বিচলন বা অস্থিরতা:
মনোযোগ অস্থির প্রকৃতির। তাই কোনো একটি বিশেষ বিষয় থেকে মনোযোগ অন্য বিষয়ে বারে বারে স্থানান্তরিত হয়, আবার ফিরে আসে। মনোযোগের বারংবার যাওয়া-আসার এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় মনোযোগের বিচলন বা অস্থিরতা (Fluctuation of attention)। যেমন——টেবিলে রাখা কোনো ঘড়ি থেকে এমন দূরত্বে দাঁড়ানো হল যাতে উক্ত টেবিলঘড়ির খুব ক্ষীণ টিকটিক শব্দ শোনা যায়। কান পেতে রাখলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে তা হল যে, মাঝে মাঝে টিকটিক শব্দ শোনা যাচ্ছে, আবার মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে না। মনোযোগের বিচলন বা অস্থিরতার জন্যই আমাদের এরূপ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ‘Masson Disc নামক যন্ত্রের সাহায্যে মনোযোগের বিচলন বা অস্থিরতা মাপা যায়।
[4] মনোযোগের নির্বাচনি ক্ষমতা:
মনোযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মনোযোগের নির্বাচনি ক্ষমতা (Selec tive Capacity)। বিশ্বজগতের অনেক ধারণা বা অনেক বস্তু একসঙ্গে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে থাকে। এগুলির মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু ধারণা বা বস্তুই আমাদের চেতনার কেন্দ্রস্থলে যায় এবং সেগুলিতে আমরা মনোনিবেশ করি।
[5] মনোযোগের পরিবর্তনশীলতা:
যে বৈশিষ্ট্যের জন্য মনোযোগ কোনো বস্তুর ওপর দীর্ঘক্ষ নিরবচ্ছিন্নভাবে স্থায়ী হয় না, এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত হয় সেই বৈশিষ্ট্যকে বলে। মনোযোগের পরিবর্তনশীলতা ( Shift of Attention)। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য আমরা ইচ্ছামতো কোনো বস্তুকে চেতনার কেন্দ্রস্থলে ধরে রাখতে পারি না।
[6] নতুনত্বের খোঁজ:
মনোযোগের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, এটি অনুসন্ধানমূলক শিক্ষার্থীর অনুসন্ধিৎসু মনে অনুসন্ধানকালে নতুন নতুন জিনিস বা বিষয়ের প্রতি কৌতূহলের জন্ম হয়, ফলে জ্ঞানের পরিধির বিস্তৃতি ঘটে।
[7] মনোযোগের দিকধর্ম:
মনোযোগের দুটি দিক আছে, সেগুলি হল— [a] ইতিবাচক বা সদর্থক দিক, [b] নেতিবাচক বা নঞর্থক দিক। মনোযোগের জন্য নির্বাচিত বিষয়টি হল, মনোযোগের ইতিবাচক বা সদর্থক (Positive) দিক। আর যে বিষয়টি মনোযোগ দ্বারা বর্জিত হয়, সেটি হল মনোযোগের নেতিবাচক বা নর্থক দিক। অর্থাৎ মনোযোগের বিষয় বা বিষয়গুলি নির্বাচিত এবং মনোযোগের বিষয় বা বিষয়গুলি বর্জিত।
[৪] সংশ্লেষণাত্মক ও বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া:
মনোযোগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া কাজ করে। সেগুলি হল—
- সংশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া (Synthetic process)
- বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া (Analytical process)।
আমরা যখন কোনো বস্তুতে মনোযোগ দিই, তখন উক্ত বস্তুকে বিশ্লেষণ করে তার সমস্ত দোষগুণ বিচার করি। তারপর বিশ্লেষণাত্মক অভিজ্ঞতাকে সংশ্লেষণের মাধ্যমে এনে একক বস্তুধর্মী অভিজ্ঞতা অর্জন করি। সুতরাং মনোযোগ বিশ্লেষণাত্মক (Analytical) ও সংশ্লেষণাত্মক (Syn thetic) উভয়প্রক্রিয়ার মিলিত ফল।
[9] মনোযোগের সংকীর্ণতা:
মনোযোগের সংকীর্ণতা ধর্মের কারণে একই সময়ে একের বেশি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া যায় না।
[10] ইন্দ্রিয়জাত যোগস্থাপন:
কোনো বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে ইন্দ্রিয়জাত যোগস্থাপন পরিলক্ষিত হয়। যেমন— দাঁত দিয়ে নখ কাটা, মাথা চুলকানো, কলম দিয়ে কাগজে দাগ কাটতে থাকা প্রভৃতি।
[11] মনোযোগের ধারাবাহিকতা:
একটি বিষয় বা বস্তু থেকে মন অন্যটিতে সঞ্চালিত হয়। এই সঞ্চালন ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই হয়। একেই বলে মনোযোগের ধারাবাহিকতা।