StudyMamu

মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য গুলি কী ছিল

July 2, 2022

মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য গুলি কী ছিল । মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি।

ভূমিকা:

সুলতানি যুগে চিত্রশিল্পের তেমন কদর ছিল না বললেই চলে। মুঘল যুগে মুসলিম চিত্রকলার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই মুঘল চিত্রকলায় ইসলামীয় চিত্রকলা, বিশেষত পারসিক চিত্রকলার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহানের আমলে সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে মুঘল শিল্পকলা দরবারী চরিত্র লাভ করেছিল। তথাপি, মুঘল চিত্রকলা কেবল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠেনি। ভারতীয় মিনিয়েচার চিত্ররীতি এবং ভারতীয় ঐতিহ্যগত চিত্ররসের সমন্বয়ের মাধ্যমে মুঘল চিত্রশিল্পের প্রাণসঞ্চার হয়েছিল।

মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য নিম্নলিখিতভাবে চিহ্নিত করা যায় : 

প্রথমত, মুঘল চিত্রকলায় ইন্দো-পারসিক রীতির অসাধারণ মিশ্রণ দেখা যায়। ভারতীয় চিত্রশিল্পীরা পারসিক চিত্রশিল্পকে নিজেদের মত করে প্রয়োগ করেন। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় ও পারসিক চিত্রকলার মধ্যে তেমন মৌলিক প্রভেদ ছিল না; কিন্তু ভারতীয় চিত্রশিল্পের অনুভূতি, উদ্দেশ্য ও মেজাজ ছিল আলাদা। স্থাপত্যের মত চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রেও ভারতীয় সঙ্গে পারসিক চিত্ররীতির সমন্বয়ে এক স্বতন্ত্র চিত্রশৈলীর বিকাশ ঘটে।

দ্বিতীয়ত, মুঘল চিত্রকলায় ভারতীয় রীতির সাথে পারসিক রীতি ছাড়াও বহ্লীক ও চিনা শিল্পরীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। বাবর ও হুমায়ুন পারসিক শিল্পরীতির অনুরাগী হলেও আকবরের সমন্বয়বাদী ধর্মীয় মনোভাব হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন আঙ্গিক গ্রহণ করে মুঘল রীতিতে এক স্বতন্ত্র চরিত্র দান করে।

তৃতীয়ত, প্রাক্-মুঘল পর্বে ভারতীয় চিত্রশিল্পের বৃহৎ পরিসরে চিত্রাঙ্কন পদ্ধতির প্রচলন ছিল। কিন্তু ক্ষুদ্র পরিসরে চিত্রাঙ্কণ পদ্ধতি অথবা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের ব্যাখ্যার চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি যাকে ‘মিনিয়েচার পেইন্টিং’ বলা হয়—সেটি মুঘল চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।

চতুর্থত, ভারতীয় চিত্রকলার মূল বিষয় ছিল প্রাকৃত ও অপ্রাকৃত কল্পনা। কিন্তু মুঘল চিত্রকলার মূলবিষয় ছিল কঠোর বাস্তব। মুঘল দরবারী চিত্রগুলির বিষয়বস্তু ছিল—বিচিত্র, সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনা, সম্রাটকে কেন্দ্র করে দৃশ্যাবলী, যুদ্ধ-যাত্রা, শিকারের দৃশ্য। চিত্রগুলি ছিল বৃহদায়তন এবং তাতে তুলির কাজ ছিল অসাধারণ।

পঞ্চমত, মুঘল চিত্রকলার বিষয়বস্তুতে সৌন্দর্য ও প্রকৃতি চেতনাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক দৃশ্য, গাছপালা, জীবজন্তুর ছবি মুঘল চিত্রকলায় স্থান পেয়েছিল। জাহাঙ্গীরের আমল থেকে চিত্রশিল্পে আঙ্গিক অপেক্ষা বক্তব্য প্রাধান্য পায় এবং বিষয়ের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের উপর জোর দেওয়া হয়। শাহজাহানের আমলে জাঁকজমক ও আড়ম্বর মুঘল চিত্রশিল্পের মুল বিষয় হিসেবে উঠে আসে।

এডওয়ার্ড ও গ্যারেট মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেেত গিয়ে লিখেছেন—’the art of painting in the Mughal age, though Persian in origin, was actually the joint product of Per sian and Hindu ideas”। পার্সি ব্রাউন আবার মুঘল চিত্রকলায় ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। দরবারে টমাস রো প্রমুখ ইউরোপীয়দের উপস্থিতিকে তিনি এর সম্ভাব্য কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন।

মূল্যায়ন: 

দেখা যায়, খ্রিস্টধর্মের বিষয়বস্তুও মুঘল চিত্রশিল্পে স্থান পেয়েছে। তথাপি বলা যায়, মুঘল চিত্রকলার মূল বিষয়বস্তু ছিল পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণের কাহিনী অথবা ভারতের প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই চিত্রকলার শৈলী ছিল ভারতীয় ও পারসিক সংমিশ্রণে রচিত। প্রকৃতপক্ষে মুঘল চিত্রশিল্পের রীতি ও বিষয়বস্তু ছিল—imaterialistic, exotic and ecletic’। কিন্তু ভারতীয় চিত্রশিল্পের বিষয়বস্তু ছিল—’spiritual and symbolic’। উপরন্তু, মুঘল চিত্রশিল্পে জনসাধারণের যোগ ছিল না বললেই চলে। সম্রাট, যুবরাজ ও দরবারী অভিজাতরাই ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠাপোষক। রাজদরবারের বাইরে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল দুরবর্তী প্রদেশগুলিতে—রাজস্থান, কাংড়া, মহারাষ্ট্র, মহীশুর অঞ্চলে।

Share Post :

Leave a Comment