StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইতিহাসে চক্রাকার এবং রৈখিক সময়ের ধারণাকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?


ইতিহাসে চক্রাকার এবং রৈখিক সময়ের ধারণাকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে? 


অতীতের সময়কাল-সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। যথা— রৈখিক বা তীরবৎ (Linear) সময়রেখা এবং চক্রাকার (Cyclical) বা বৃত্তাকার সময়রেখা।



রৈখিক কালচেতনা:
ইতিহাসের সময়ের একটি সূচনাপর্ব এবং একটি সমাপ্তিপর্ব আছে। তাই ইতিহাস সূচনাপর্ব থেকে যাত্রা শুরু করে ক্রমশ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলে।কোনো কোনো মানুষের বিশ্বাস—ইতিহাসের কালের অগ্রগতি ঘটে রৈখিক ধারায়। খ্রিস্টানধর্ম অনুসারে, একদিন না একদিন কালের এই অগ্রগতির সমাপ্তি ঘটবে। অর্থাৎ, কালের অগ্রগতি সর্বদা সম্মুখবর্তী, অনেকটা তিরের মতো, যা অতীত থেকে বর্তমান এবং বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হয়। এজন্য অতীতের কোনো যুগের পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই।খ্রিস্টান দৃষ্টিভঙ্গি এবং পাশ্চাত্যের অধিকাংশ ঐতিহাসিকের দ্বারা ঐতিহাসিক সময়কালের রৈখিক ধারা সমর্থিত হয়। খ্রিস্টান ধর্মমত অনুসারে, একদা ঐতিহাসিক যুগের ‘শুরু’ হয়েছে এবং যার শুরু আছে তার শেষও আছে।



রৈখিক কালচেতনা এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এর সমর্থকগনরা দেখিয়েছেন যে রৈখিক কাল চেতনার একটি সমাপ্তি পর্ব আছে। এবং এরা চক্রাকার কাল চেতনার অবিশ্বাসী। ইতিহাসের যুগ বা সময়ের ধারা চক্রাকার পথে আবর্তিত হতে থাকে এ মত তারা মানতে  অরাজি।


 চক্রাকার কালচেতনা:
 ইতিহাসের যুগ বা সময়ের ধারা চক্রাকার পথে আবর্তিত হয়। এর অর্থ হল ইতিহাসের বিভিন্ন যুগগুলি চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে ফিরে আসে। তাই আজ বা আগামীকালের ঘটনায় কোনো নতুনত্ব নেই। কেননা ইতিহাসের সময়ের ধারা চক্রাকারে এগিয়ে অতীতের কোনো যুগই আবার বর্তমানে ফিরে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও আবার ফিরে আসবে।প্রাচীন ভারতীয় ধারণায়ওকালের গতি চক্রাকারে (Cyclical) আবর্তিত হয়। 



পুরাণ অনুসারে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি—এই চারটি যুগ অনন্তকাল ধরে আবর্তিত হয়ে চলেছে। এই মতানুসারে, প্রতিটি পরবর্তী যুগ প্রতিটি পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় হীনতর, অর্থাৎ সত্যযুগ যেমন শ্রেষ্ঠতম, তেমনই কলিযুগ হল নিকৃষ্টতম। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি যখন অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়, তখন কলিযুগের সার্বিক ধ্বংসসাধন হয়। ধ্বংসসাধন মানেই কিন্তু চূড়ান্ত সর্বনাশ নয়, কারণ এর পরেই সময়ের চক্রাকার পথে এগিয়ে পুনরায় সত্যযুগের প্রত্যাবর্তন হয়। এরপর ধীরে ধীরে আবার ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের আগমন ঘটে। অর্থাৎ সমগ্র বিষয়টি চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এর ফলে পুনরাবর্তন আছে, কিন্তু কোনো পরিবর্তনের বা নতুন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। 


 ইবন খালদুন-এর অভিমত : আরবের ঐতিহাসিক ইবন খালদুন মনে করেন যে, এই চক্রাকার গতিতে তিনটি স্তর ঘুরে ঘুরে আসে— [i] যুদ্ধ ও বিজয়, [ii] বসতির প্রসার ও নগরায়ণ এবং [iii] অবক্ষয় ও ধ্বংস। 



টয়েনবির অভিমত : আর্নল্ড টয়েনবি চক্রাকার যুগ পরিবর্তনে যে তিনটি স্তরের কথা বলেছেন সেগুলি হল—[i] জন্ম, [ii] বৃদ্ধি ও [iii] ধ্বংস। © থাপারের অভিমত : ড. রোমিলা থাপার দেখিয়েছেন যে, চতুর্যুগের ধারণার পাশাপাশি কালের পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে সম্যক ধারণাও ভারতে প্রচলিত ছিল। তাঁর মতে, সাধারণত গ্রহনক্ষত্রের অবস্থানগত আলোচনার ক্ষেত্রে বৃত্তাকার কালচেতনা ব্যবহৃত হত। আর একরৈখিক কালপঞ্জি ব্যবহৃত হত রাজকীর্তি বিবরণের ক্ষেত্রে। ‘গুপ্তাব্দ, শকাব্দ’ এর উদাহরণ।



Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *