হর্ষবর্ধনের সিংহাসন আহরণ।
রাজনৈতিক আবর্তের মধ্য থেকেই হর্ষবর্ধনের সিংহাসনে আরোহণ ঘটে। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারে তাঁর সভাকবি বাণভট্ট ও চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ থেকে তথ্য পাওয়া গেলেও উভয়ের বর্ণনায় কিছুটা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। বাণভট্ট থানেশ্বরের সিংহাসনে হর্ষবর্ধনের আরোহণের উল্লেখ করলেও হিউয়েন সাঙ হর্ষবর্ধন ও তাঁর পূর্বসূরিদের কনৌজের শাসক বলে উল্লেখ করেছেন। হিউয়েন সাঙ এই বিষয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হল রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর রাজ্যে বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাজ-অমাত্য পো-নি বা ভান্ডির নেতৃত্বে কনৌজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা হর্ষবর্ধনকে তাঁদের রাজ্যের শাসনভার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানালে তিনি প্রথমে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। পরে বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর-এর আদেশে তিনি এতে সম্মত হন এবং ‘মহারাজ’ অভিধা গ্রহণের পরিবর্তে কেবল ‘কনৌজের রাজা’ এই অভিধা গ্রহণের স্বীকৃতি পান।
রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর তাঁর ছোটভাই যে থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেছিলেন ।থানেশ্বরের সিংহাসনে আরোহণ ছিল তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তি। প্রকৃত ঘটনা হল এই যে মালবরাজ কর্তৃক কনৌজের মৌখরীরাজ গ্রহবর্মণের মৃত্যুর পর রাজ্যশ্রী বন্দিনী হন। রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্য তাঁকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করেন। যেহেতু রাজ্যশ্রীর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না এবং কনৌজ রাজ্যে এক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিল সেহেতু হর্ষবর্ধনকেই কনৌজের সিংহাসনের জন্য আহ্বান করা হয়। তিনি ঐ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হর্ষকে বলপূর্বক কনৌজের সিংহাসন দখল করতে হয়েছিল। এই ধরনের চিন্তাভাবনার পিছনে রয়েছে মৃত মৌখরীরাজ গ্রহবর্মণের উত্তরসূরির অস্তিত্ব, যা তৎকালীন লেখ ও সাহিত্যে বিধৃত হয়ে রয়েছে।
গ্রহবর্মণ-রাজ্যশ্রীর কোনো পুত্রসন্তান ছিল না ঠিকই, কিন্তু গ্রহবর্মণের একজন ভাই ও অবম্ভীবর্মণের (গ্রহবর্মণের পিতা) উত্তরসূরি হিসাবে একজনের নাম উল্লেখিত রয়েছে নালন্দা সীলে। এই ব্যক্তির পূর্ণ নামটি ভেঙে গেছে, তবে বোঝা যায় নামটির আদ্য অক্ষর ‘সু’। তাই এরকম মনে করা একেবারে অসঙ্গত হবে না। যে গ্রহবর্মণের আকস্মিক মৃত্যুর পর ঐ ব্যক্তি কনৌজের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।
গ্রহবর্মণের মৃত্যুর পরে পরেই বিনা বাধায় হর্ষ কনৌজের সিংহাসনে বসেছিলেন এমন মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। অথবা এমনও বলা যায় যে হর্ষ-র কনৌজের সিংহাসনপ্রাপ্তি একেবারে নিষ্কণ্টক ছিল না। যাই হোক না কেন, হর্যের সিংহাসনে আরোহণের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে একটি অব্দ চালু করা হয় যা হর্ষাব্দ নামে পরিচিত।