StudyMamu

ইতিহাসের সাথে অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক।

February 21, 2022

 ইতিহাসের সাথে অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক।

  ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ গভীর। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে । যে সুসংবদ্ধ জ্ঞান অতি থেকে বিবিত করে থাকে তাই ইতিহাস। ইতিহাস শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ ইতি হ আস অর্থাৎ অতীতে এরকমই ঘটেছিল। ইতিহাস শব্দটি গ্রিক istoria শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ অনুসন্ধান। অন্যদিকে সমাজ বিজ্ঞান শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ socious এবং logos থেকে । socious শব্দের অর্থ সমাজ বা socity এবং logos শব্দের অর্থ বিজ্ঞান। সমাজ বিজ্ঞান শব্দের আক্ষরিক অর্থ সমাজের বিজ্ঞান এবং অগ্রগতির সামাজিক প্রেক্ষাপত। অন্যভাবে বললে সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ অমানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

  ইতিহাসে এক বড় অংশ জুড়ে আছে সামাজিক ইতিহাসের কথা। স্বভাবতই সমাজ বিদ্যার সঙ্গে ইতিহাস সে যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকবে তা প্রায় অবশ্যম্ভাবী। সমাজবিজ্ঞান যেহেতু সমাজ ও মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে সেহেতু ইতিহাসে সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব দেখা যায়। ইতিহাস রচনায় ঐতিহাসিক যেমন কোন একটি সময় কালের ইতিহাস ব্যাখ্যা করার সময় তিনি যেমন সেই সময়কালের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেন ঠিক একই সাথে তিনি সেই সময় কালের সামাজিক ইতিহাসের কথাও তুলে ধরেন ‌ কোন একটি সময়কালের সামাজিক অবস্থান সমাজে নারীদের অবস্থান সামাজিক জাতি বর্ণ ব্যবস্থা হিন্দু মুসলিম ঐক্য সমাজব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় গুলি ঐতিহাসিক তার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেন অর্থাৎ ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।

   অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন, ইতিহাস হল মানব বিদ্যার এবং সমাজবিজ্ঞান সমূহের আত্মা। ইতিহাস থেকে নজর নিয়ে যেমন সমাজবিজ্ঞান রচিত হয় সেরূপ সমাজ বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকলে একজন ঐতিহাসিক পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস রচনা করতে সক্ষম হবেন সমাজের মানবিক আচরণ সংজ্ঞায়িত করা হয় সেই মানব জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইতিহাসে স্থান পায়। সমাজবদ্ধ মানুষের অতীতের কাহিনী হল ইতিহাস। সমাজবিজ্ঞানের কাজ হল সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের জীবনের সমস্ত রকম কাহিনীকে নথিভুক্ত করে রাখা এবং ইতিহাসের কাহিনীর ভিত্তি স্থাপন করে। কখনো কখনো বিশেষ ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান বলতে শুধুমাত্র সমাজবিজ্ঞান বোঝায়। এমিইল, ডুখাইম, কাল মার্কস ও মাক্স ভেবার কে সাধারণত আধুনিক সামাজিক বিজ্ঞানের মূল স্থপতি বলে বিবেচনা করা হয়।

  একজন ঐতিহাসিক ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে যদি সেই সময় কালের সমাজ ও মানুষের আচরন বিষয়টি ব্যাখ্যা না করেন তাহলে সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণ। তাই ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানকে যেমন কাজে লাগানো সেইরূপ সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আশ্রয়ী। অল থাক ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান ও ভাই পারস্পারিক সম্পর্ক যুক্ত। সমাজবিজ্ঞান ইতিহাসে এক বড় স্থান দখল করে রেখেছে যা ইতিহাস রচনায় আরো সুস্পষ্ট ধারণা মানুষের কাছে তুলে ধরে।

  মানুষ সভ্যতা হলো সঙ্ঘবদ্ধ জীবনের ফল। সমাজবিজ্ঞান সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের জীবনের কাহিনী নত করে রাখে আর ইতিহাস সেই কাহিনী ভিত্তি স্থাপন করে। সমাজবিদ্যা মানুষের জীবন যাপন ভাবধারাকে প্রভাবিত করার মত যে সমস্ত উপাদান যেমন ভৌগোলিক জৈবিক মনস্তাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলির নথিভূক্ত করার পাশাপাশি ব্যাখ্যাও করে। তেমনি বলা যায় সমাজবিদ্যার জ্ঞান থাকলে এই ইতিহাসে ভাবধারাকে সহজে ব্যাখ্যা করা যায় সমাজ বিদ্যার বৈশিষ্ট্য ইতিহাসের অভ্যন্তরে নানা ঘটনা উপযুক্ত বর্ণনা দিতে পারে।

  অন্যদিকে আবার বলা যায় যে ইতিহাসের আলোকে সমাজ বিজ্ঞানের সব শাখার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কোন বিশেষ সময়ে সামাজিক অবস্থা মানুষের জীবনযাপন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সঠিক বর্ণনা করতে ইতিহাসের জ্ঞানের বিশেষ জরুরী বলে মনে করা হয়। রক্ষণশীল ঐতিহাসিকরা অনেক সময় ইতিহাসের সঙ্গি সমাজবিদ্যা সম্পর্ক মানতে চান না। তথাপি এ কথা বলা যায় মানব সভ্যতা বা সমাজবিজ্ঞানে নানা দিক বর্ণনা করতে সমাজবিদ্যা ইতিহাসের নানা ঘটনা ঘটনাপঞ্জী কে কাজে লাগান। সুতরাং ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরতা উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে এবং উভয় বিদ্যা এর ফলে যথাযথ ভাবে উপকৃত হচ্ছে।

  সর্বশেষে এ কথা বলা যেতে পারে যে ইতিহাস সমাজবিজ্ঞান একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একথা স্বীকার করা যায় যে সমকালীন সমাজ ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োজন অতীত সম্পর্কে ধারণা এবং এ তথ্য আমরা ইতিহাস থেকে লাভ করি। সমাজবিদ্যা থেকে আলাদা করে ইতিহাস পাঠ যেমন অসম্পূর্ণ তেমনই ইতিহাসকে সমাজবিদ্যা থেকে পৃথক করে বর্ণনা করা ও অযৌক্তিক। বিজ্ঞানসম্মত উপায় ইতিহাস বা সমাজবিদ্যার বিভিন্ন শাখা বর্ণনার জন্য জরুরী একে অপরের জ্ঞান যথার্থ ভাবে ব্যবহার করা।

Share Post :

Leave a Comment