StudyMamu

নীল বিদ্রোহে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা।

February 16, 2022

নীল বিদ্রোহে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা।


  উনিশ শতকের শেষের দিকে নীলচাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় কৃষকরা ধান ও পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ব্রিটিশ নীলকরেরা অত্যাচার আর নিপিরণের মাধ্যমে নীলচাষে বাধ্য করলে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে বাংলায় নীল চাষ বিলুপ্ত হয়। নীল বিদ্রোহ দমন করার জন্য ইংরেজ সরকার 1860 সালে নীল কমিশন গড়ে তোলেন। সেই সময় বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন লেখক ও কবি নীল বিদ্রোহের উপর গল্প, নাটক, কবিতা, লিখে নীলচাষীদের বিদ্রোহে উৎসাহ যোগান।

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদিত হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা নীল বিদ্রোহের নায়ক দের কথা উল্লেখ করেছিলেন। হরিশচন্দ্র তার হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিবরণ সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। এজন্য তাকে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা শিশির কুমার ঘোষ ও এই বিদ্রোহের সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি শুধু সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেননি তিনি যশোহর নদীয়ার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সঙ্ঘবদ্ধ করেন। 

  অন্যদিকে দীনবন্ধু মিত্র তার নীলদর্পণ নাটক লিখে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন এবং এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ জেমস লং এর নামে প্রকাশিত হয় যেসব নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল তাও প্রত্যেক বাঙালির জানা ‌ সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র নীলকমল একটি বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তা আমরা প্রমোদ রঞ্জন সেনগুপ্ত বিরচিত নীল বিদ্রোহ ও বাঙালি সমাজ গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি। হরিশচন্দ্র যখন নীল বিদ্রোহের ফলে একপ্রকার সর্বশ্রান্ত হন তখন তাকে সাহায্য করতে খুব বেশি মানুষ এগিয়ে আসেনি তবু নীল বিদ্রোহ বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যতটা সহানুভূতি আকর্ষণ করেছিল অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহ তা করতে পারেনি। হিন্দু প্যাট্রিয়ট ছাড়া অন্য পত্রপত্রিকাও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরে ছিল।

   নীল বিদ্রোহে যারা সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল তাহলো আইনজীবী সম্প্রদায় কিন্তু মোত্তার তিনু চক্রবর্তী মতে কিছু আইনজীবী ছাড়া অধিকাংশ আইনজীবী নিজেদের স্বার্থে এবং যতটা সম্ভব গা বাঁচিয়ে কৃষকদের সাহায্য করেছিল। তবে সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু আইনজীবী কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অবশ্যই একথা স্বীকার্য যে অধিকাংশ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ নীল বিদ্রোহ নিয়ে মাথা না ঘামালেও হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ শিশির কুমার ঘোষ মনমোহন ঘোষ দীনবন্ধু মিত্র মধুসূদন দত্ত প্রতিটি ব্যক্তি বিদ্রোহের সমর্থন জানিয়েছিলেন। 

  দীনবন্ধু মিত্রের লেখা নীলদর্পণ এর বাংলা দেশ ও বাঙালি ঝড় তুলেছিল অনেকেই এই নাটকে হ্যারিয়েট স্টোর লেখা অংকেলটস টমস কেবিন এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর গ্র্যান্ড ও সচিব সীটনকার নীলদর্পণ এর ইংরেজি অনুবাদ এবং তা বিনামূল্যে বিতরণের মধ্য দিয়ে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। লং এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন 2 উদ্দেশ্যে তিনি একজন মিশনারি হিসেবে কৃষকদের প্রতি অত্যাচার ও শোষণ সমর্থন করতে পারেননি। দ্বিতীয়তঃ তিনি চেয়েছিলাম ভারতে ইংরেজ শাসক চিরস্থায়ী হোক ।লং অবশ্যই স্বাভাবিক কারণেই নীলকরদের বিরাগভাজন হন এবং তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। বাংলা নীল চাষীদের জন্য তিনি যে মানবিক ও দরদি ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তার জন্য অকুণ্ঠ প্রশংসা অবশ্যই তার প্রাপ্য।

  লং এর কারাবাসের ঘটনা বাঙালি বুদ্ধিজীবীকে গভীরভাবে ব্যতীত করলেও এবং সরকারের কাছে তার কারাবাসের মেয়াদ রাজ করার জন্য আবেদন করলেও মিশনারীরা তার বিরোধিতা করেছিল। আরে উল্লেখযোগ্য যে রং সাহেবের বিচারের আগেই কলকাতার চার্জ মিশনারি সোসাইটি তাকে বহিষ্কার করার কথাও চিন্তা করেছিল। সুতরাং মিশনারীদের ভূমিকা সর্ব সময় কৃষকদের পথে ছিল একথা মনে করার কোন কারণ নেই।

   নীল বিদ্রোহ বাঙালি সমাজ কে নাড়া দিয়েছিল। বাংলার কৃষক সম্প্রদায় লক্ষ্য করেছিল যে সরকার নীলকরদের বিরোধিতা করলেও নীলকরদের বিরোধিতা করেনি। সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ফলে কৃষকরা সরকারের সদিচ্ছা উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে সরকার কেউ তারা তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে সরকার এটাও চাইনিজে নীলকর সাহেবরা কৃষকদের অত্যাচার করুক। কিন্তু সরকারি নীতি স্বসময় স্থানীয় প্রশাসক মানতো না, ফলে অনেক সময় তাদের যোগসাজশে নীলকর সাহেবরা অত্যাচার করত। এর ফলে ও সরকার বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল।

    অন্যদিকে নীল বিদ্রোহ বিশেষ করে লং সাহেবের কারাবাস ও জরিমানা বাঙালি মধ্যবিত্ত কে উত্তেজিত করেছিল। ব্রিটিশ উদারনীতিবাদ সম্পর্কে তাদের মহ কিছুটা কাটতে শুরু করে। জাতিগত বৈষম্য আর তিক্ত হয়ে পড়তে থাকে নীল বিদ্রোহ কে কেন্দ্র করে যে জনমত গড়ে উঠেছিল তা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ সে যথেষ্ট সহায়তা হয়েছিল। শিশির কুমার ঘোষের ভাষায় এই নীল বিদ্রোহী সর্বপ্রথম দেশের লক্ষ্যে রাজনৈতিক আন্দোলনের ও সঙ্ঘবদ্ধ হইবার প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা দিয়েছিল ‌।

Share Post :

1 Comment

  1. Anonymous

    January 26, 2024

    Thank you sir

Leave a Comment