ইতিহাস ও সাহিত্যের মধ্যে সম্পর্ক ।
ইতিহাস ও সাহিত্যের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বা যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর। কারণ উভয়ই মানুষের কথা বলে । বস্তুত উনবিংশ শতকে পর্যন্ত ইতিহাস চর্চা কে সাহিত্য চর্চার একটি শাখা রূপেই দেখা হতো । ইতিহাস হল মানব জীবনের নথি, অন্যদিকে সাহিত্য হল মানব জীবনের প্রতিফলন উভয়ই সমাজের দর্পণ । ইতিহাস চর্চা ও সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে দূরত্ব কম হলেও উভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য রয়েছে । উভয় নৈকট্য এর প্রধান কারণ এই যে একজন সাহিত্যিক এবং একজন ঐতিহাসিক উৎস মানুষ ও সমাজ সাহিত্যে বারংবার প্রকাশিত হয়েছে যে মানুষই তার উপজীব্য ।
ইতিহাস এবং সাহিত্য উভয়ই পারস্পারিক নির্ভরশীল । ইতিহাস আশ্রয়ী সাহিত্যে যেমন অসংখ্য ঠিক তেমনি সাহিত্য নির্ভর ইতিহাস রচনায় অপ্রতুল নয় । ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিকগণ এমন অনেক অবস্থায় বলতে হয় যেখানে সমকালীন সাহিত্য উপাদান থেকেই তাকে তার তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় চতুর্দশ শতকের মধ্যভাগে ইউরোপে প্লেগ মহামারী দেখা দিয়েছিল সেই মহামারীর সমকালীন পরিস্থিতিকে বাস্তবোচিত ভঙ্গিমায় তুলে ধরেছেন মানববাদী সাহিত্যিক ও তার মেয়ে নামক গ্রন্থে মহামারীর ইতিহাস রচয়িতা ইরানের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় ।
খ্রিস্টীয় প্রথম দুই শতকে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম উপকূলের সঙ্গে যে একাধিক চীন এবং অন্যদিকে রোমান সাম্রাজ্যের একটি সমৃদ্ধশালী সমুদ্র বাণিজ্য চলত তার বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে গ্রিক লেখকদের ভ্রমণ সাহিত্য পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সি । এবং খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় লেখা ভৌগোলিক সাহিত্য জিওগ্রাফিক।
ইতিহাসকে নির্ভর করেও অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়ে থাকে । বহু প্রাচীনকাল থেকেই সাহিত্যিকদের সমকালীন বা নিকট অতীতের কোনো ঘটনা উপর ভিত্তি করে অপরূপ সাহিত্য সৃষ্টির নমুনা পাওয়া যায় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিক সাহিত্যিক কালিদাসের রঘুবংশ তিনি লিখেছেন ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন ।এবং তাকে প্রথম পরাজিত করে বন্ধ করেছিলেন এবং পরে তাকে রাজ্য সহ মুক্তি দিয়েছিলেন।
যেহেতু মানুষ নিয়ে কারবার সেহেতু ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক উভয়ই রাস্তা শুরু হয় এক স্থান থেকে । কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হবার পরেই দুজনের দুটি পথ দুদিকে চলতে থাকে। কিন্তু পরস্পর পরস্পরকে নিকটে থাকার চেষ্টা করে থাকে।
ইতিহাসের পরিসর নিয়ে অতীতকাল থেকে এই পন্ডিত মহলে দ্বিধা-বিভক্ত ।ইতিহাস ইতিহাস লিখন নিয়েও তর্ক বিতর্ক ও কম হয়নি । তবে পূর্বে রক্ষণশীলতা ত্যাগ করে ইতিহাস পরিণত হয়েছে সমাজ বিজ্ঞানের ।এপ্রসঙ্গে সংযোগ ঘটে দর্শন সাহিত্যের। যদিও অতীতেও সাহিত্য ও ইতিহাস ছিল একে অপরের দোষ ।তাই ঐতিহাসিকদের সাহিত্য নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই হয় । উপন্যাস গল্প নাটকের প্রচুর উপাদান বিদ্যমান আছে তা অস্বীকার করা যায় না। তাই উপাদানকে থেকে বের করে আনা ঐতিহাসিকের কাজ । দূর্গেশ্নন্দিনি, ঢ়োকাইচরিত মানস উপন্যাস হল উল্লেখযোগ্য সাহিত্য ।যেখান থেকে ওই সমকালের সার্থক ছবি তুলে ধরা হয়। ঐতিহাসিক এই ধরনের সাহিত্যের কাছে ঋণী । ঐতিহাসিক অশীন দাশগুপ্ত এর মতে, ইতিহাস ও সাহিত্য নৈকট্য।
Thank you sir.